সৌজন্যতা খুব সামান্য বিষয় দিয়ে আদায় করা যায়। যেমন ‘ধন্যবাদ’ ‘শোকরিয়া’ বা ‘থ্যাংক ইউ’ বলা। ধন্যবাদ বলার জন্য তেমন কোনো উপলক্ষের অপেক্ষা করা বোকামি। ধরুন, রিকশা দিয়ে কোথাও গেলেন, রিকশাওয়ালাকে ভাড়াটা দেয়ার পর একটা ধন্যবাদ বলে দিতে পারেন। এতে আপনার তেমন কোনো ক্ষতি হলো না, কিন্তু রিকশাওয়ালার মনটা খুশি হয়ে যাবে। দোকান থেকে কিছু কিনলেন, কেনাকাটা শেষ হওয়ার পর দোকানিকে হাসিমুখে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিন। সামান্য কারণে ধন্যবাদ দিতে শিখুন, ব্যাপকহারে সালাম দেয়ার সাহস করুন।

কিছুদিন আগের কথা। কোনো একটা নবীন পত্রিকার জন্য এক তরুণ লেখা চেয়ে ফোন দিলেন। এর আগে তিনি ফেসবুকে আমার নাম্বার চেয়েছেন। নাম্বার পেয়ে ফোন দিলেন। ফোনে তাদের পত্রিকার জন্য একটি লেখা কামনা করলেন। কিন্তু ব্যস্ততা থাকার কারণে আমি সবিনয়ে নিজের অপারগতা প্রকাশ করলাম, আমার পক্ষে লেখা সম্ভব হবে না। তরুণ ‘ও আচ্ছা’ বলে ফোন রেখে দিলেন। না কোনো সৌজন্যমূলক বাক্য—আল্লাহ হাফেজ বা সালাম, নিদেনপক্ষে ‘আচ্ছা রাখি তাহলে’ বলারও প্রয়োজন বোধ করলেন না। আমি অবাক হয়ে ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।

একটা জাতির উন্নতির অন্যতম নিদর্শন হলো তারা কতটা বিনয়ী ও সৌজন্যতাপ্রিয়। এ কারণে ইসলাম সৌজন্যতার জন্য ব্যাপকহারে সালামের প্রচলন করতে বলেছে। কথার শুরুতে এবং শেষে সালাম, দেখা হওয়ার শুরুতে সালাম, শেষেও। আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সালামকে মানুষের আত্মিক উন্নতির অন্যতম পথ্য নির্বাচন করেছেন। এটা কেবল সৌজন্যতার শব্দ নয়, এটা মানুষের মানসিক প্রশান্তির এক দাওয়াই বলে গেছেন তিনি। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা বৃদ্ধির অব্যর্থ নিয়ামক।

ইসলাম সৌজন্যতাকে কেবল মুখের বুলিতে সীমাবদ্ধ রাখেনি, এটার জন্য ইসলামি আইনশাস্ত্রে (ফিকহ) স্বতন্ত্র অধ্যায় রচনা করা হয়েছে। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ থেকে শুরু করে সকল ইসলামি আইনবিষয়ক গ্রন্থে সালাম বিষয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। সালাম কীভাবে দেয়া হবে, কাকে দেয়া হবে, কখন দিতে হবে, ছোট বড়কে দেবে নাকি স্ত্রী স্বামীকে দেবে, আরোহী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে দেবে নাকি শিক্ষক ছাত্রকে দেবে—এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে আমাদের রাসুলের হাদিসের আলোকে। রাসুল নিজ জীবনে এমন সৌজন্যতার আতিশয্য আমাদের দেখিয়ে গিয়েছেন।

আমাদের সালামের মধ্যেও কৃপণতা আছে। আমরা সাধারণত পরিচিত মানুষদের সালাম দিয়ে থাকি, অপরিচিতদের সালাম দিতে আমাদের কিছুটা কুণ্ঠাবোধ হয়। না, সালাম বা ধন্যবাদ দেয়ার জন্য পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। মানুষ হিসেবে যে পৃথিবীতে বিরাজমান, তার আর নতুন করে পরিচয় দেবার কিছু নেই। প্রত্যেক মানুষ সৌজন্যতার হকদার। তাকে তার সঠিক সম্মান দিতে শিখুন।


মাসিক নবধ্বনির সৌজন্যে