‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়…’

এই ‘ত্রিভুবন’ মানে কোন কোন ভুবন? দুই ভুবন দিয়ে কি দুনিয়ার কাল ও পরকালের সময়কে বুঝায়? মাঝখানের ভুবন (সময়) তাহলে কোনটা?

কিন্তু এই ব্যাখ্যায় সমাধান হয় না। মরমী গায়ক বারী সিদ্দিকী (রহ.) বলে গেছেন, 
‘…একদিন তুমি পড়বে ধরা রে,
ত্রিভুবনের বিচার যেদিন হয়’
তার মানে ‘ত্রিভুবন’ হলো ইহকালীন কোনো ভুবন, পরকালে কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় এই ভুবন ত্রয়ীকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। 

অভিধান বলছে, ত্রিভুবন অর্থ: স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল। এ দেখি আরেক মুশকিলের কথা। অভিধান যে ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে তাতে তো ইসলামি বিষয়-আশয়ে এ শব্দ ব্যবহার বেশ গর্হিত। তাহলে আরেকটু বিশদ ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক।

ফেসবুকে সনাতন ধর্মীয় একটা পেজে মোটামুটি যুৎসই জবাব পেলাম। পেজে কেউ একজন প্রশ্ন করেছেন, ‘ত্রিভুবন কথাটি আমরা শুনেছি। কিন্তু চৌদ্দ ভুবন বলতে কী বোঝায়?’

আরিব্বাপরে! ত্রিভুবন নিয়েই আছি মুশকিলে, চৌদ্দ ভুবন নিয়ে টান দিলে তো ধুতি খুলে যাবে গো দাদা! চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধারের কাহাওয়াত এখান থেকেই এসেছে কিনা কে জানে!

যা হোক, পেজ থেকে প্রশ্নের যে উত্তর দেয়া হয়েছে সেটা শোনার পর আমার মতো অনেকেই এই ত্রি আর চৌদ্দ নিয়ে ধন্ধে পড়ে যাবেন। উত্তরটা এমন, ‘এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে আমরা যে ভুবনে আছি তাকে ভূলোক বা মর্ত্যলোক বলা হয়, এর ঊর্ধ্বদিকের গ্রহলোকগুলোকে লৌকিক কথায় স্বর্গলোক বলা হয় এবং নিম্নদিকের গ্রহলোকগুলোকে লৌকিক কথায় পাতাললোক বলা হয়। এভাবে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতালকে ত্রিভুবন বলা হয়ে থাকে। ঊর্ধ্ব, মধ্য ও অধঃ এভাবেও অনেকে ভাগ করে থাকেন।

সুতরাং, ভূলোকের ক্রমশঃ ঊর্ধ্বের ছয়টি গ্রহলোকের নাম শাস্ত্রে প্রতিপাদিত হয়েছে যথা___ভূবর্লোক, স্বর্গলোক, মহর্লোক, জনলোক, তপোলোক ও সত্যলোক বা ব্রহ্মলোক এবং ক্রমশঃ নিম্নের সাতটি গ্রহলোক, যথা___অতল, বিতল, সুতল, মহাতল, তলাতল, রসাতল ও পাতাল লোক অবস্থিত। এইভাবে আমাদের এই ক্ষুদ্র ব্রহ্মাণ্ডটি চৌদ্দভুবনবিশিষ্ট। অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে, তার মধ্যে আমাদের এই চৌদ্দভুবন-বিশিষ্ট ব্রহ্মাণ্ডটি সবচেয়ে ছোট বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।’

বিরাট জ্ঞানী কথাবার্তা!

যাকগে, শাস্ত্রের কথা তো জানা হলো। এতোদিন ‘ত্রিভুবন’ নিয়ে যা ভেবে এসেছি সবেই ভুল। তবে ত্রিভুবন নিয়ে সংশয় কাটলেও ‘শাস্ত্রীয় ভুবন’ নিয়ে যে নতুন সংশয় তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে নিঃসন্দিহান।

টুইস্ট:
সনাতন ধর্মের ওই পেজের পোস্টটির নিচে ধর্মীয় লোকজন বেশ কয়েকটা কমেন্ট করেছেন। কমেন্ট পড়তে গিয়ে দেখি সবাই লিখেছেন- ‘হরে কৃষ্ণ’। ১৪টা কমেন্টের ১১টাই ‘হরে কৃষ্ণ’, আর কিছু না। পরে বুঝলাম, এটা নিশ্চয় ‘আমিন’-এর সনাতন রূপ। আমাদের আপামর ‘মুসলিম’ জনতা ফেসবুকে যেমন কলা আর লাউয়ের মধ্যে ‘আল্লাহ’ নাম দেখে আমিন আর সুবহানাল্লাহ বলে কমেন্ট করে সোয়াব কামাই করে, তেমনি আপামর সনাতনীরাও ‘ত্রি আর চৌদ্দ ভুবন’-এর পরিচয় পেয়ে হরে কৃষ্ণ লিখে দস্তুরমতো পুণ্যলাভ করছে। শর্টকাটে স্বর্গে যাবার ধান্ধা সব ধর্মেই বিরাজমান।