অনেক পর্দাওয়ালা নারী পর্দাহীন নারীদের অবজ্ঞা-ঘৃণার চোখে দেখে। অনেক নামাজি ব্যক্তি বেনামাজি ব্যক্তিকে ঘৃণা-নীচতার দৃষ্টিতে দেখে। এমন ঠিক নয়। এটাও এক ধরনের অহংকার; ইবাদতের অহংকার, নিজেকে অধিক মুমিন ভাবার আত্মগৌরব। যার ভেতরে নামাজ, পর্দা, ইবাদতের এমন আত্মগৌরব তৈরি হবে তিনি ওই পর্দাহীন নারী আর বেনামাজির চেয়েও হতভাগা।

শেখ সাদি রহ. যখন বয়সে কেবল কিশোর, তখন তিনি তার বাবার সঙ্গে কোনো এক বুজুর্গের খানকায় গিয়েছিলেন। সেখানে ওইদিন ইবাদতের কোনো মজমা চলছিল, অনেক ভক্ত-মুরিদান জমা হয়েছিলেন সেখানে। তো, ইবাদত-বন্দেগি শেষ করে রাতেরবেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন।
শেখ সাদির বাবা ভোররাতে ছেলেকে জাগিয়ে তুললেন তাহাজ্জুদের জন্য। কিশোর শেখ সাদি তাহাজ্জুদের জন্য অজু করে যখন খানকায় ফিরে আসছিলেন তখন দেখেন, ভক্ত-মুরিদদের অনেকে ঘুমে বিভোর হয়ে আছে, তাহাজ্জুদ আদায়ের ব্যাপারে তাদের কোনো খবরই নেই।
এটা দেখে শেখ সাদি আফসোস করে তার বাবাকে বললেন, ‘দেখলে বাবা, এই লোকেরা ইবাদত করার জন্য এসেছে এখানে অথচ তারা তাহাজ্জুদ নামাজটাই পড়ছে না।’
শেখ সাদির বাবা ছেলেকে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘ঘুমিয়ে যাদের তাহাজ্জুদ কাজা হয়ে গেল তারা যতটুকু হতভাগা, তার চেয়ে অনেক বেশি হতভাগা তুমি—যে নিজের তাহাজ্জুদ নিয়ে আত্মগর্বিত হয়ে পড়েছো।’

মানুষের জন্য অন্তরে ভালোবাসার মহাসাগর তৈরি করুন। কী পুণ্য করবেন অপরকে ঘৃণা করে? কী লাভ হবে আরেকজনকে নীচ-অপদস্থ ভেবে? আপনি জান্নাতে যাবেন, আরেকজনের জন্যও জান্নাতের রাস্তা সহজ করুন। আল্লাহর জান্নাত এত ছোট নয় যে শত কোটি মানুষকে দিলেও আপনার জন্য কম পড়ে যাবে। মানুষকে জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা দেখান, জাহান্নাম থেকে তাদের বাঁচাতে এমনভাবে হৃদয়ের তড়প জাগিয়ে তুলুন, যেভাবে ভাই তার ভাইকে আগুনে পড়তে দেখলে তড়পায়। ওটাই মুসলমানিত্ব। মুসলমানিত্বের মধ্যে ঘৃণার কোনো স্থান নেই, ইবাদতের আত্মগৌরবেরও কোনো স্থান নেই!