রাজনীতি নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন, আমি কথা বলতে পারি; যে কেউ বলতে পারে। বস্তুত রাজনীতি নিয়েই আমরা অধিক কথা বলে থাকি। হররোজ বলি। যেখানে সেখানে, যার তার সঙ্গে বসে বড় বড় রাজনৈতিক বুলি আওড়াই। আমরা কথা বলি জাতীয় রাজনীতি নিয়ে, কথা বলি বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়েও। রাষ্ট্র রাজা উজির-নাজির প্রজা প্রহেলিকা-ইত্যকার সব বিষয়ই আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় স্থান পায়। কারো ছাল তুলে ফেলি, তর্কের গরুকে গাছে চড়াই, কারোকে নামিয়ে দেই কুৎসার অতল তলে।

কিন্তু এই যে আমরা হররোজ শত শত শব্দ ব্যয় করছি, হাজার হাজার কথা দিয়ে রাজনীতিকে আলোচনার আবশ্যিক অনুষঙ্গ বানিয়ে নিজের রাজনৈতিক বিজ্ঞতা প্রকাশে ব্রতী হচ্ছি-আখেরে কোনো ফায়দা কি হচ্ছে?

আমি কিশোর-তরুণদের কথা বলছি। যারা বই ছেড়ে রাজনীতির ফাঁকা বুলি আওড়ায়, পাঠ ছেড়ে রাজনীতিকদের দোপাট্টা খোলার দুরাচার কর্মে লিপ্ত, ক্লাস ছেড়ে রাজপথের হাঙ্গামা যাদের অধিক প্রিয়; রাজনীতিবিষয়ক বাতচিত তাদের কী প্রয়োজন? যদিও আমাদের মাথার মুকুট মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. বলে গেছেন-‘পড়াশোনাই ছাত্রদের বড় রাজনীতি’।

বিষয়টি ভাববার। একটা চিন্তা মাথায় রাখুন! আপনি রাজনীতি নিয়ে যে শব্দ-বাক্য ব্যয় করছেন, তার দ্বারা সমাজের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি? রাজনীতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো সুসময় আসছে কি? আসছে না। কারণ, আপনি এমন কেউ নন যার কথায় সমাজ-রাজনীতি-রাজনৈতিক পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। সমাজের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা সামান্যই মাত্র। 

আপনি নিজের ক্ষোভ বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে রাজনীতি বিষয়ে বিষোদ্গার করছেন, নিজের মানসিক আস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অপর এক দলকে তুচ্ছজ্ঞান করছেন। তাতে সমাজের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সমাজ আপনার কথায় সামান্যতম ভালোর দিকে এগুচ্ছে না। বরং আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে।

কিন্তু একবার ভাবুন, আপনি রাজনীতি নিয়ে একটা কথা বললেন আর সেটা সকল রাজনৈতিক মহলে সমাদৃত হলো। আপনি সমাজের জন্য একটা সমাধান দিলেন আর সমাজের মানুষ সেই সমাধানে নিজেদের জীবন বদলে নেয়ার কোশেশে ব্রতী হলো। এমনটি কি হওয়া সম্ভব?

সম্ভব। যদি আপনি আজকের অহেতুক রাজনৈতিক আলোচনা বাদ দিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করেন। নিজেকে এমন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার চাদরে আবৃত করেন, যে চাদরের আঁচলের ছায়ায় প্রাণ পাবে সমাজ ও মানবতা। তাহলে আপনার সামান্য কথায় বদলে যেতে পারে পুরো একটি সমাজ, এক পৃথিবীকে।

আজকের অনর্থক কথা অপচয় না করে, কথাগুলো জমিয়ে রাখনু; আর নিজেকে তৈরি করুন এমন এক ব্যক্তিত্বে, যখন আপনার কথা শোনার জন্য লাখো মানুষ কান পেতে বসে থাকবে।

———————–
মাসিক নবধ্বনির অক্টোবর সংখ্যার স্বাগত কলাম থেকে