প্রিয়তমা বইটির রচনা তখন মাঝামাঝি পর্যায়ে। এরই মধ্যে একদিন কাজী বললো, ভাই, প্রচ্ছদ নিয়া কী চিন্তা করলেন? প্রিয়তমার প্রচ্ছদ তো গ্রাফিক্স ট্রাফিক্স হইলে চলবো না। যুৎসই প্রশ্ন। আমার অধিকাংশ বইয়ের প্রচ্ছদই বই লেখার আগে বানানো হয়। প্রচ্ছদ দেখে ‘আত্মতৃপ্তিতে’ ভুগে ভুগে বই লেখায় মনোনিবেশ করি। কিন্তু প্রিয়তমার প্রচ্ছদের ব্যাপারে এখনও কোনো কিছু মাথায় আসেনি। কী করা যায় বলো তো? প্রশ্ন করলাম কাজীকে। : আনকমন কিছু একটা করতে হবে। :: তা তো বটেই। সেই আনকমনটা কেমন? : আনকমন মানে হলো আনকমন, যেটা কমন না আর কি! :: চড়ায়া তোমার দাঁত ফালামু…। জলদি আনকমন কোনো থিম দাও। বাংলাবাজার একটা কাঁসা-পিতলের দোকান আছে। ঢুঁ মারলাম ওই দোকানে। তাদের গিয়ে বললাম, আমি যদি পিতল দিয়ে চারটা অক্ষর বানাতে চাই, কেমন খরচ পড়বে? কী করা যায়? আনকমন কিছু? আচ্ছা, কাপড়ের উপর যদি সুঁই-সুতা দিয়ে ‘প্রিয়তমা’ লিখে সেটাকে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে প্রচ্ছদ বানানো যায়, তাহলে কিন্তু জোশ হবে ব্যাপারটা। কাজী পরামর্শ দিলো। এটা আমার মনে ধরলো। গত কুরবানির ঈদের আগে বড় কাজী Kalam ভাইকে নিয়ে গেলাম গুলিস্তান খদ্দর মার্কেটে। খদ্দর মার্কেটে আনকমন কিছু কাপড় পাওয়া যায়। এ দোকান ও দোকান ঘুরে ঘুরে এক দোকানে গিয়ে পছন্দ হলো প্রিয়তমার কাপড়। রাজশাহী সিল্ক, দাম প্রতি গজ ৬০০ টাকা। নো প্রবলেম, আনকমন বলে কথা। ৬০০ টাকা গজের রাজশাহী সিল্ক বগলদাবা করে আনকমন তৃপ্তিতে বাড়ি গেলাম। বউকে আগেই বলে রেখেছিলাম, এবার আমার বইয়ের প্রচ্ছদ করবে তুমি। ‘প্রিয়তমা’র প্রচ্ছদ বানাবে ব্যক্তিগত প্রিয়তমা, এর চেয়ে আনকমন আর কিছু হতে পারে না। বউ তো দারুণ এক্সাইটেড! আমার ঢাকায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ওদিকে বউ অসুস্থ। দুদিনের মধ্যে সুচীশৈলী নির্মাণ না করতে পারলে তো বিষয়টা কেঁচে যাবে। তাঁকে বললাম, এ বইটা আমার জীবনের অন্যতম সাধনাসিদ্ধ বই। সেখানে তোমার হাতের আঁচড় না থাকলে কি হয়? বেচারী কষ্ট করে দুদিনের মধ্যেই সুঁই-সুতার প্রেমিত আঁচড়ে লিখে দিলো ‘প্রিয়তমা’। প্রিয়তমার সুঁইয়ের অজস্র ফোঁড় গেঁথে আছে ‘প্রিয়তমা’র প্রচ্ছদে। এ পরম আরাধ্য বস্তু! |
Categories: পুস্তকালয়