একটি বই এবং একটি সিনেমার মধ্যে পার্থক্য কী-এটা বুঝা দরকার। আজকাল এমন অনেক হচ্ছে, কোনো পপুলার বই অ্যাডাপশন করে সিনেমা বানানো হয়। আমাদের যুক্তি-দুটোর কাহিনি তো একই, তাহলে কেন দুই দিন, পাঁচ দিন লাগিয়ে বই পড়বো? সিনেমা দেখে নিলেই হয়। মুফতে নায়ক-নায়িকার রসায়নটাও মিলে যায়, মন্দ কী?

কিন্তু একটি বই শুধুমাত্র বিনোদন নয়, যেখানে সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যই দৃশ্যমান, চোখের সামনে বাস্তব এবং সিনেমা তৈরিই হয় বিনোদনেরজন্য। বই কিন্তু কেবল বিনোদন নয়। পাঠক যখন একটি বই পড়েন তখন তিনি বইয়ের বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভেতরে একটা কল্পলোক সৃষ্টি করেন। তিনি কল্পনায় বইয়ের দৃশ্যপটকে নিজের মতো করে সাজাতে থাকেন। বইয়ের পাত্র-পাত্রী, স্থান-কাল, পরিবেশ-পরিস্থিতি সব নিজের মনের মধ্যে কল্পনা করতে থাকেন। লেখকের বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের মনের মধ্যে একেকটা ক্যারেক্টারের একেকটা অবয়ব দাঁড়িয়ে যায় ধীরে ধীরে। লেখকের বয়ানের ভেতর দিয়ে ওই ক্যারেক্টারের প্রতি পাঠকের ভালোবাসা বা ঘৃণা অথবা মায়া জন্ম নেয়। তেমনি বইয়ের প্রতিটি পরিবেশও পাঠক নিজের মধ্যে কল্পনা করে করে মনের মধ্যেই নিজস্ব পৃথিবী নির্মাণ করেন। এটাই মূলত একটি বইয়ের স্বার্থকতা।

কটি বই আপনার কল্পনার রাজ্যকে বিস্তৃত করবে। আপনার চিন্তার ক্ষমতাকে পরিশীলিত করবে। আপনার ইমাজিনেশনকে শানিত করবে। বই পাঠের সাথে সাথে আপনার ভেতরের ইমাজিনেশন ক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কিন্তু একটি সিনেমা একবার দেখলেই তার প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। যতোটুকু ম্যাসেজ দেয়ার কথা, সেটার জন্য দর্শকের মনের মধ্যে নতুন কোনো ইমাজিনেশন বা কল্পনা তৈরির প্রয়োজন হয় না। একটি সিনেমার দ্য এন্ড-এর সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার বিনোদন খতম! সিনেমা হয়তো অন্যভাবে আপনার মনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করবে, দৃশ্যপট বাস্তবিকভাবে সামনে নিয়ে আসবে, কিন্তু ইমাজিনেশন শক্তিকে অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু করে ফেলবে। কারণ সিনেমা মানেই এন্টারটেইনমেন্ট, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

পক্ষান্তরে বই আপনার ইমাজিনেশনের জন্য একক ও অদ্বিতীয় উপকরণ। এর কোনো বিকল্প নেই।