আড়াই বছর পর।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর দরোজায় আবার এক সকালে কড়া নড়ে উঠলো— ব্যভিচারিণী হাজির! তাকে শরিয়ত মোতাবেক পাথরছোঁড়া শাস্তি দিন হে আল্লাহর রাসুল!
কোলে আড়াই বছরের নিষ্পাপ শিশু তার। শিশুর মুখে রুটির টুকরো, যাতে উপস্থিত সকলে বুঝতে পারে- তার সন্তান আর তার বুকের দুধের উপর নির্ভরশীল নয়। সে এখন অন্য খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে সক্ষম। সে না থাকলেও তার কোনো সমস্যা হবে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আবার সবিনয় নিবেদন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার সঙ্গে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার অনুযায়ী আমি এসে উপস্থিত হয়েছি। সকল শর্ত পূর্ণ হয়ে গেছে। শরিয়তের বিধান কার্যকর করতে এখন আর কোনো বাধা নেই। তাই দয়া করে দ্রুত আমাকে পবিত্র করুন। দুনিয়ার সামান্য শাস্তির বিনিময়ে আখেরাতের অফুরন্ত শাস্তি থেকে আমাকে রক্ষা করুন।

মদিনার বাতাস কি স্তব্ধ ছিলো কিছুক্ষণের জন্য? মদিনার নরোম দিলের লোকদের চোখগুলো কি আজ একটু বেশি কেঁদেছে? মদিনার খর্জুরবীথিকা-বনে আজ সবুজেরা কেমন নিষ্প্রভ! কোথায় সেই আড়াই বছরের শিশুসন্তানটি, আম্মি আম্মি বলে যে ডাকতো তার মাকে?

অবশেষে রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম শরিয়তের বিধান কার্যকর করার নির্দেশ দিলেন এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো সেই সে পাপিষ্ঠা মেয়েটির। ইতিহাস যার নাম বলেনি অনাগত পৃথিবীর কাছে।

***
মেয়েটির জানাজা সমাগত।
মদিনার নবি, আমার রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তার জানাজা নামাজ পড়ানোর জন্য সামনে অগ্রসর হলেন। তার দু’চোখ অশ্রুর জলে টলটলায়মান। তিনি আজ ইমাম। নামাজ পড়াবেন এক ব্যভিচারিণীর।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর চোখও ভেজা। হাত ধরে ফেললেন আল্লাহর রাসুলের। জিজ্ঞেস করলেন— মুর্শিদ আমার, এ মেয়ে ব্যভিচারিণী। অথচ আপনি নিজে তার জানাজা নামাজ পড়াতে যাচ্ছেন! আমায় বলুন রহস্যের অন্যূন উচ্চারণ!

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বড় বেদনা নিয়ে তাকালেন ওমরের দিকে। দ্বিধাহীনকণ্ঠে বললেন, হে ওমর, মেয়েটি ব্যভিচারিণী। সে পাপিষ্ঠা। গর্হিত তার অপরাধ। কিন্তু সে এমন আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে তওবা করেছে যে, যদি সেই তওবার দশ ভাগের এক ভাগও গোটা মদিনাবাসীর মাঝে বণ্টন করে দেয়া হতো, তাহলে সমস্ত মদিনাবসীর গোনাহ মাফ হয়ে যেতো।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে গেলেন সামনে। উচ্চকণ্ঠে তাকবির দিলেন— আল্লাহু আকবার! তার উচ্চারণের সঙ্গে সমস্ত মদিনাবাসী উচ্চারণ করলো— আল্লাহু আকবার! আল্লাহুম্মাগফির লি হায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা…।

[‘সিংহহৃদয়’ গ্রন্থ থেকে]