সহিংস সময়ে একটা সামান্য জরুরি কথা বলি। 

তাবেয়ি হজরত শুরাইহ রহমাতুল্লাহি আলায়হি একবার হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্রাহু আলায়হি ওয়সাল্লাম যখন ঘরে আসতেন তখন সবার আগে কোন কাজটা করতেন?’

আয়েশা রাদি. উত্তর দিলেন, ‘তিনি সবার আগে মেসওয়াক করতেন।’
(মুসলিম শরিফের বরাতে মুনতাখাব হাদিস, পৃষ্ঠা ১৯৮)

যারা পান খান, কিংবা বিড়ি-সিগারেট বা যেকোনো ধরনের তামাক ব্যবহার করেন অথবা এ ধরনের কিছুই ব্যবহার করেন না, তারা যখন বাইরে থেকে ঘরে আসেন; বিশেষত রাতে যখন স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে ঘুমোতে যান, তখন অতি আবশ্যিকভাবে মেসওয়াক করে বা ব্রাশ করে ঘুমোতে যাবেন। এটা সুন্নত।

এই সুন্নতের গুরুত্ব আমাদের জীবনে অপরিসীম। যারা পান খান বা ধূমপান করেন তাদের মুখে স্বাভাবিকভাবেই দুর্গন্ধ হয়। আপনার কাছে সে গন্ধ ভালো লাগলেও আপনার স্ত্রী বা সন্তানের কাছে সেটা ভালো লাগবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তারা হয়তো লজ্জা বা সম্ভ্রমের কথা ভেবে সেটা মুখে বলে না, কিন্তু ঠিকই আপনার প্রতি বিরক্ত হয়। এতে তারা কষ্টও পায়। কোনো মানুষকে কষ্ট দেয়া অবশ্যই গোনাহর কাজ। এমন গোনাহ থেকে বেঁচে থাকুন। 

নারীদের বেলায়ও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। অবশ্য আমাদের সমাজে পান বা ধূমপান করা নারীর সংখ্যা কম। তবে ঘুমানোর আগে দাঁত পরিষ্কার করা সকলের কর্তব্য। বিশেষত দাম্পত্যজীবনে এই সুন্নতের ওপর আমল করা সকলেরই উচিত বলে মনে করি। 

রাসুল সা. প্রতি নামাজের আগে মেসওয়াক করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে, তার মানে দিনে অন্তত পাঁচবার। কেন রাসুল এতবার মেসওয়াক করার কথা বললেন? 

আমাদের মুখে দুর্গন্ধ হয় সাধারণত তিনটি কারণে। এক. যেসব খাবার আমরা খাই সেই খাবারের ক্ষুদ্র কণাগুলো আমাদের জিহ্বা ও দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। মুখের লালার সহায়তায় কিছুক্ষণ পরই সেগুলো পঁচতে শুরু করে। ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। 
দুই. আমাদের পেট খালি থাকলে কিংবা হজমে সমস্যা হলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
তিন. যদি আমরা পান খাই বা ধূমপান করি। 

তো দেখা যায়, মুখে দুর্গন্ধ হবার কারণ হমেশােই ঘটছে। সুতরাং এই দুর্গন্ধ নিয়ে যখন আমরা অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে যাই, অমরা তখন অপরের বিরক্ত উৎপাদন করি। সে আমার সঙ্গে কথা বলছে বটে কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার চোখ-মুখ কুঁচকে থাকে। কিংবা মুখের দুর্গন্ধের কারণে সে আমার কথায় মনোযোগই দিতে পারছে না। আপনি যত উঁচু তবকার মানুষই হন না কেন, শ্রোতার সামনে মুহূর্তে আপনি ব্যক্তিত্বহীন মানুষ বলে বিবেচিত হবেন। 

এ কারণে যে ব্যক্তি দিনে অন্তত পাঁচবার মেসওয়াক করবে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করবে, তার মুখ থেকে কখনোই দুর্গন্ধ আসবে না। 

রাসুল সা. ছিলেন জনবান্ধব নেতা। দিনের শুরু থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত তিনি শত শত মানুষের সামনে কথা বলতেন। মুসলিমদের সামনে তো বটেই, অনেক অমুসলিম আসতো তাঁর কাছে। সকলের কথা ভেবেই রাসুল বারবার মেসওয়াক করতেন, যাতে তাঁর মুখের সামান্য দুর্গন্ধও যেন অপরের কষ্টের কারণ না হয়।

শুধু বাইরের পৃথিবী দেখলেই হবে! নিজের ঘরেও তিনি ছিলেন সদা সতর্ক। তাঁর কারণে তাঁর কোনো স্ত্রী কষ্ট পাক, সে ব্যাপারেও ছিলেন পূর্ণ সচেতন। তার চেয়ে পারফেক্ট হাজবেন্ড এই পৃথিবীতে আর কে আছে!

এমনই ছিলেন আমার নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। মানুষের জন্য, মানবতার নবি।